"ঢাকার কাছাকাছি এক দিনে ভ্রমনের ১০ টি
জায়গা"
যারা ঢাকায় থাকেন করোনাকালীন সময়ে বাসায় থেকে
থেকে অনেকেরই,
বিশেষ করে মেয়ে ও বাচ্চাদের নাভিঃশ্বাস অবস্থা। দূরে কোথাও যাওয়াও
এখন অনেকের জন্য কঠিন। তাই সাপ্তাহিক ছুটিতে পরিবার নিয়ে ঢাকার কাছাকাছি কোথাও
ঘুরে আসতে পারেন।
পানাম সিটি ও বাংলাদেশ লোকশিল্প জাদুঘর
হারিয়ে যাওয়া শহর হিসাবে পরিচিত পানাম নগর বা
পানাম সিটি ঢাকার পার্শবর্তী নারায়ণগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। পৃথিবীর ১০০টি
ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক শহরের একটি এই পানাম নগর।
এর পাশেই শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের উদ্যোগে
বিশাল এলাকা জুরে নির্মিতি বাংলাদেশ লোকশিল্প জাদুঘর অবস্থিত। এখানে ঐতিহাসিক সব
নিদর্শন দেখার পাশাপাশি সল্পমূল্যে কিনতে পাবেন জামদানি শাড়ি।
যাতায়াত :
গুলিস্তান থেকে স্বদেশ, বোরাক ও সোনারগাঁ নামক বাসে
উঠে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় নামতে হবে।
মোগরাপাড়া থেকে পানাম সিটি বা লোকশিল্প জাদুঘরের দূরত্ব প্রায় ২ কি.মি.। চাইলে
রিক্সা অথবা সিএনজি তে করে যেতে পারেন।
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি
ঢাকা থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে মানিকগঞ্জ জেলার
সাটুরিয়া উপজেলায় বালিয়াটি গ্রামে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি অবস্থিত । এই জমিদার বাড়ির বিশাল সব স্থাপনা আপনাকে নি:সন্দেহে
অবাক করবে । বালিয়াটি জমিদারবাড়ির স্থাপত্যশৈলী প্রাচীন, উপনিবেশিক ধাঁচের। বাড়ির
প্রতিটি প্রাসাদে সূক্ষ্ম কারুকাজ ও নকশা সহজেই পর্যটকের দৃষ্টি কাড়ে। বিশেষ করে
সামনের সারির প্রাসাদের থামগুলোর ওপরের দিকে সর্পাকৃতি ও মানুষের মাথার অপূর্ব নকশা সবাইকে মোহিত করে।
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের বড় জমিদার
বাড়িগুলোর একটি। মোট সাতটি স্থাপনা নিয়ে এই জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। এছাড়াও
রয়েছে সান বাধানো পুকুর ঘাট। জমিদার বাড়ির পুরোটাই মনোরম পরিবেশে ঘেরা! প্রতি
সপ্তাহে রোববার ও সোমবার অর্ধবেলা ছাড়া প্রতিদিনই সকাল ৯.০০টা থেকে বিকাল ৫.০০ টা
পর্যন্ত গেট দর্শনার্থীদের জন্য গেট উন্মুক্ত থাকে।
যাতায়াত :
ঢাকার গাবতলী থেকে এসবি লিংক ও জনসেবা বাসে
সাটুরিয়া যাওয়া যাবে। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৭০-৮০ টাকা। সাটুরিয়া পৌঁছে সেখান থেকে
রিকশা বা ভ্যানে করেও যাওয়া যায়।
জিন্দা পার্ক
সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশের ছোয়া পেতে
নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত জিন্দা পার্ক হতে পারে একটি আদর্শ জায়গা। ঢাকা থেকে
দুরত্ব মাত্র ৩৫ কিলোমিটার। ১৫০ একর জায়গা নিয়ে এই জিন্দা পার্কটি গড়ে উঠেছে। দশ
হাজারের বেশি গাছ,
৫টি জলধার ও অসংখ্য পাখি রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ক্যান্টিন , লাইব্রেরি, মিনি চিড়িয়াখানা ও জলাধারে ঘোরার জন্য
নৌকা। খাওয়া দাওয়ার জন্য পার্কের ভিতরেই রেস্টুরেন্ট আছে।
প্রবেশমূল্যঃ প্রাপ্তবয়স্ক ১০০ টাকা, ছোটোদের ৫০ টাকা।
যাতায়াত :
জিন্দা পার্ক যাবার সবচেয়ে সহজ উপায় হল ৩০০
ফিট দিয়ে। সেখান থেকে যেতে হবে কাঞ্চন ব্রিজ। এরপর ঢাকা সিটি বাইপাস ধরে কিছু
দুরেই জিন্দা পার্ক।
অথবা ঢাকা হতে টঙ্গী মীরের বাজার হয়ে বাইপাস
রাস্তা দিয়েও যাওয়া যায়। এছাড়া কাঁচপুর ব্রিজ দিয়ে ভুলতা গাওছিয়া হয়ে বাইপাস দিয়ে
কাঞ্চন ব্রিজ হয়ে জিন্দা পার্কে যাওয়া যায়।
গোলাপ গ্রাম
একটু মুক্ত হাওয়া আর স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে
ছুটির দিনে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার অদূরে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের ‘গোলাপ গ্রামে’। এই ইউনিয়নের সাদুল্লাহপুর, শ্যামপুর, মোস্তাপাড়া গ্রামজুড়ে আছে গোলাপের রাজ্য। যতদূর চোখ যায়, শুধু গোলাপ আর গোলাপ। তাই এ গ্রামগুলো এখন ‘গোলাপ
গ্রাম’ নামেই বেশি পরিচিত।
গোলাপ গ্রামের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় মূলত
গোলাপের সিজনে,
শীতে। পুরো গ্রামেই রয়েছে গোলাপ সহ রজনীগন্ধা, চন্দ্রমল্লিকার ক্ষেত।
যাতায়াত :
মিরপুর দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাট থেকে
সাহদুল্লাহপুর ঘাটের উদ্দেশ্যে ৩০ মিনিট পরপর ইঞ্জিনচালিত বোট ছাড়ে। সাদুল্লাহপুর
যেতে যেতে ৪৫ মিনিট- ১ ঘণ্টা লাগবে।
এছাড়া মিরপুর শাহআলী মাজার এর সামনে কোনাবাড়ী
বাসষ্ট্যান্ড থেকে বাসে করে আকরান বাজার। আকরান বাজার থেকে অটোতে করে ফুলের বাজারে
কিংবা সাদুল্লাহপুর গ্রাম।
মহেরা জমিদার বাড়ি
টাঙ্গাইলে ঘোরার মত অনেক জায়গা আছে যা এক
দিনে ঘুরে শেষ করা কঠিন। তার মধ্যে মহেরা জমিদার বাড়ি সবচেয়ে সুন্দর। বর্তমানে এটি
পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি তিনটি স্থাপনা নিয়ে তৈরি। বাড়ির
ভেতরের দিকে বিশাল খাঁচায় বিভিন্ন রকম পাখি পালা হয়। রয়েছে একটি সুদৃশ্য কয়েকটি
পুকুরও।
যাতায়াত :
টাঙ্গাইল গামী বাসে "নাটিয়া পাড়া” বাস স্ট্যান্ডে নামতে হবে।
সময় লাগবে ২-২.৩০ ঘন্টার মত। এরপর একটা অটো রিকশা নিয়ে সহজেই মহেরা জমিদার বাড়ি
যেতে পারবেন। (এছাড়া মহাখালি থেকে “ঝটিকা সার্ভিস” নামে একটি বাস যায়)
বাংলার তাজমহল
চলচিত্র নির্মাতা আহসানুল্লাহ মনি আগ্রার
তাজমহলের আদলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নির্মান করেছেন তাজমহল। রেপ্লিকা হলেও প্রায়
৫৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে নির্মান করা হয়েছে।
যাতায়াত :
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে ভৈরব, নরসিংদী কিংবা কিশোরগঞ্জগামী
বাসে বরপা বাসস্ট্যান্ডে নেমে সিএনজিতে করে বাংলার তাজমহল দেখতে যেতে পারবেন।
মুড়াপারা জমিদার বাড়ি
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ১৮৮৯ সালে প্রায় ৬২
বিঘা জমির উপর বাবু রামরতন ব্যানার্জী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই জমিদার বাড়িটিও
ঐতিহাসিক নিদর্শন ধারন করে আছে। বর্তমানে এটি একটি কলেজ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে যা
সরকারি মুড়াপাড়া কলেজ নামে পরিচিত।
যাতায়াত : ঢাকার সায়েদাবাদ, গুলিস্তান বা যাত্রাবাড়ি
বাস টার্মিনাল থেকে বাসে করে (মেঘলা, আসিয়ান বা গ্লোরি) করে
ভুলতা বা রূপসী বাসস্ট্যান্ডে যেতে হবে। নরসিংদী ও ভৈরবগামী বাসে ভুলতা এসে সেখান
থেকে রিকশা বা সিএনজিতে (জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়া) দিয়ে সরাসরি মুড়াপাড়া জমিদার
বাড়ি যাওয়া যায়।
করোনাকালে কিছু কিছু ভ্রমন স্পট খুলে দেয়া হয়েছে আবার অনেকগুলো এখনও বন্ধ রয়েছে । তাই ভ্রমনের আগে একটু নিশ্চিত হয়ে নিবেন।
অনির্দিষ্ট জায়গায় আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। ধন্যবাদ।
=============